ওই বাসন্তী ছিল বোবা-অভাবী, এখনকার বাসন্তীরা বাকপটু-স্বভাবী
প্রকাশিত : ২১:২২, ১০ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২২:৩৩, ১২ জুলাই ২০১৮
আওয়ামী লীগকে নিয়ে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি। ক্রমান্বয়ে এর সাথে যুক্ত হয়েছে ছদ্মবেশী নামধারী কিছু সুশীল। সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যার লড়াই সাময়িক শক্তিশালী বলে মনে হলেও নিয়তি কাউকে ছাড়ে না। আওয়ামী লীগের উদার নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেও নিয়তির বিচারে কেউ মাফ পায়নি। ইতিহাস তাই বলে। এর একটা উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট।
কুড়িগ্রামের চিলমারীর সেই বাকপ্রতিবন্ধী বাসন্তীর কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার। যার একটি ছবি পুরো বিশ্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলো। এই কাজটি একজন সাংবাদিক করেছিল, কিন্তু এর পিছনে ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের মূল চরিত্রে অভিনয়কারী বাসন্তী কিন্তু এখনো বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যারই বদান্যতায়ই। সেই সময় সে অভিনয় করে পেয়েছিলো মাত্র ৫০ টাকা আর রিলিফের কিছু চাল। অপরদিকে নেপথ্য নায়করা পুরোদেশকেই লুটেপুটে খেয়ে গেছে দীর্ঘদিন।
আসুন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারীদের নিয়ে একটু আলোচনা করি। বাকপ্রতিবন্ধী বাসন্তীকে নগদ ৫০ টাকা ও রিলিফের কিছু চাল দিয়ে ছবিটি তুলেছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ইত্তেফাকের তৎকালীন ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ ও কুড়িগ্রামের রিলিফ কমিটির কর্মকর্তা আনছার আলী। ছবিটি ছিল বাসন্তীকে শাড়ির পরিবর্তে মাছ ধরার জাল পরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং মুখের মধ্যে একটা কাঁচা পাট শাক গুঁজে দেয়া হয়েছিল। ছবির মর্মার্থ ছিল, দেশের মেয়েরা অভাবের তাড়নায় ইজ্জত আব্রু ঢেকে রাখতে পারছে না এবং খাবারের তীব্র অভাব। এই ছবিটি ১৯৭৪ সালে ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো দুর্ভিক্ষের সময় বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়েছিল, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্য দেশি বিদেশিদের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই একটি ছবি পুরো বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজে কালিমা লেপন করে দিয়েছিলো। যা থেকে পরে ফায়দা লুটেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
শুরুতেই বলছিলাম না নিয়তি কাউকে ছাড়ে না। নিয়তির বিচার অনেক কঠিন। কোনো পরাশক্তিরই সেখানে বিচারকের ভূমিকায় থাকার কোনো সুযোগ নেই। বাসন্তী নাটকের অন্যতম ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ বছর কয়েক আগে রামপুরার বাসায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন। বেশ কয়েকদিন লাশ পড়েছিল রামপুরার বাসার ফ্লোরে হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায়।
আরেকজন আনসার আলী, সেও বাসার সামনে প্রতিপক্ষের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আর বাসন্তী, ৭৪ সালের পর ৯৬ সাল পর্যন্ত কিন্তু তার খবর কেউ রাখেনি। ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে যারা তাকে ব্যবহার করেছিল তারাও কোনো খোঁজ নেয়নি।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই বাসন্তীকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই জমি ও ঘর করে দেন। কিছুদিন পর সেই জমি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার বাসন্তীকে ঘর নির্মাণ করে দেন শেখ হাসিনা। কিছুদিন আগে সেই ঘরটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেলে তাকে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।নিঃসন্তান অবস্থায় এই ভাতা নিয়েই ভাইয়ের সংসারে এখন থাকছে বাসন্তী।
এখনো আমাদের সমাজে অনেকেই বাসন্তীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ওই বাসন্তী ছিল বোবা এবং অভাবী। আর এখনকার বাসন্তীরা বাকপটু ও স্বভাবী। তাদের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। ( সূত্রঃ লেখকের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত)
লেখকঃ প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।